নিজস্ব প্রতিনিধি

কুমিল্লার মুরাদনগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগে আবুল কালাম নামের শ্রমিক দলের এক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় থানায় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা করা হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
গত সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে মুরাদনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম মাসুদ রানা। তিনি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে থানায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। আটক আবুল কালাম উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। আটক হওয়ার আগে চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন।
পুলিশ জানায়, থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন যুবদলের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে থানার উপপরিদর্শক আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়। সোমবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরদিকে, চাঁদাবাজি ও হামলা করে মারধরের ঘটনায় উপজেলার আকুবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল বাদী হয়ে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন। হেফাজতে থাকা আবুল কালামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
আবুল কালাম ছাড়া গ্রেফতার অন্য পাঁচ জন হলেন- উপজেলার রহিমপুর গ্রামের মো. হোসেন, নবীপুর গ্রামের ওহাব আলী, মুরাদনগর উত্তরপাড়া গ্রামের আবুল হাসান, পরমতলা গ্রামের মহসিন সরকার ও রহিমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন। তারা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা মাসুদ রানা জাতীয় সংবাদকে বলেন, ‘আবুল কালাম শ্রমিক দলের নেতা। এ ছাড়া গ্রেফতার অন্য পাঁচ জন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সক্রিয় কর্মী।’
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান জাতীয় সংবাদকে বলেন, ‘একজন চাঁদাবাজকে আটকের জেরে তারা থানায় হামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী জানান, সোমবার ইফতারের আগে তিনিসহ তিন জন একটি অটোরিকশায় আকুবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিপি দিতে হবে। তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তারাও হামলা করেন। চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, আমাদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫ থেকে ২০ জন থানার সামনে এসে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। এর মধ্যে যুবদল নেতা মাসুদের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা করেন। আমরা তিন-চার জন থানা ভবনের গেটের ভেতরে ছিলাম, বাকিরা ছিলেন বাইরে। তারা প্রথমে আমাদের বাইরে থাকা অন্তত ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় পুলিশ গেট বন্ধ করে দিলে তারা গেট ভেঙে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ঘটনার সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ৩০ মিনিট দফায় দফায় থানায় গেট ভাঙার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা থানার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পরে কয়েক দফা চেষ্টা করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে থানায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনার নেপথ্যে উপদেষ্টা আসিফের চাচাতো ভাই উবায়দুল সিদ্দিকী। আবুল কালামের স্ট্যান্ডের একটি সিএনজির (অটোরিকশা) সঙ্গে উবায়দুলকে বহনকারী সিএনজির ধাক্কা লাগে। এ সময় উবায়দুল নেমে অটোরিকশার চালককে থাপ্পড় দেন। তখন গণ্ডগোল বাধলে আবুল কালাম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা একটু দূরে গিয়ে পুলিশের খবর দিয়ে আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আমাদের কিছু লোক থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের কাছে জানতে চায়, কেন অন্যায়ভাবে আবুল কালামকে গ্রেফতার করেছেন। এ সময় ওসি রুমের ভেতরে আমাদের লোকদের জিম্মি করে উবায়দুলসহ পেটাতে থাকেন। পরে ফেসবুকে লাইভে মানুষ ঘটনাটি জানতে পেরে থানায় যান তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য। মূল ঘটনা হলো এটা। তারা এখন মিথ্যাচার করছে আমাদের বিরুদ্ধে। উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে আমাদের।’